বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমাণ্ডার মেজর জেনারেল সি.আর.দত্ত (চিত্ত রঞ্জন দত্ত) বীরউত্তম আমাদের সকলকে কাঁদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অদ্য মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ইহলোক ত্যাগ করে পরলোক গমন করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। মৃত্যুকালে তিনি এক পুত্র, তিন কন্যা ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হচ্ছে।
সাহসী ও দুর্জয় ব্যাক্তিত্বের অধিকারী মেজর জেনারেল( অব.) সি আর দত্ত বীরউত্তম ছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এর অধিকার আদায়ের অগ্রদূত, আলোর দিশারি এবং অসাম্প্রদায়িক বাঙালির এক উজ্জল দৃষ্টান্ত।
তিনি বাংলাদেশ রাইফেলসের (বর্তমানে বিজিবি) প্রথম ডিরেক্টর জেনারেল। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান, ধর্মীয় বৈষম্যবিরোধী মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মেজর জেনারেল( অব.) সি আর দত্ত বীরউত্তম। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাঁকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করে সরকার।
মেজর জেনারেল( অব.) সি আর দত্ত বীরউত্তম এর জন্ম ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি আসামের শিলংয়ে। তাঁর পৈতৃক বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম উপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত এবং মায়ের নাম লাবণ্য প্রভা দত্ত। শিলংয়ের ‘লাবান গভর্নমেন্ট হাইস্কুল’-এ দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তার বাবা চাকরি থেকে অবসর নিয়ে হবিগঞ্জে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
হবিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুল থেকে ১৯৪৪ সালে তিনি মাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তী সময়ে কলকাতার আশুতোষ কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়ে ছাত্রাবাসে থাকা শুরু করেন। পরে খুলনার দৌলতপুর কলেজের বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হন এবং ঐ কলেজ থেকেই বিএসসি পাস করেন। সি আর দত্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন ১৯৫১ সালে।
মেজর জেনারেল (অব.)সি. আর.দত্ত বীর উত্তমের আজন্ম লালিত স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। তাঁর এ স্বপ্ন সফল হোক এ প্রত্যাশায় মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সমবেদনা জ্ঞাপন করা হল।